নতুন জন্ম নিবন্ধনের জন্য আবেদন করার নিয়ম

২০০৪ সালের জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন আইন অনুযায়ী শিশু জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে তার নতুন জন্ম নিবন্ধন নিশ্চত করা বাধ্যতামূলক। তবে সময়ীক অসুবিধার কারণে জন্ম নিবন্ধন করতে ব্যর্থ হলে। শিশুর বয়স ৫ বছর হওয়ার আগে জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। তবে কোন কারণে যদি এই ডেট বিলম্ব হয়। তাহলে ৫ বছরের পর জন্ম নিবন্ধন তৈরিতে বিশেষ ডকুমেন্ট বা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে। তাই শিশু জন্মের ৭ সপ্তাহেরর মধ্যে তারা জন্ম সনদ তৈরি করা পরিবারের অভিভাবকদের নৈতিক দায়িত্ব।

আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব। কিভাবে অনলাইনে নতুন জন্ম নিবন্ধন করা যায়, জন্ম নিবন্ধন তৈরি করতে কি কি ডকুমেন্ট লাগবে। কতটাকা খরচ হবে এবং কোথায় কাগজপত্র জমা দিতে হবে ইত্যাদি। তাই অব্যশই সম্পূর্ণ পোস্টি পড়ার অনুরোধ রইল।

নতুন জন্ম নিবন্ধন করতে কি কি কাগজ পত্র লাগবে

আপনি যদি আপনার সন্তান বা পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের জন্ম সনদ নিবন্ধন করতে চান তাহলে আপনার নিকট নিম্নোক্ত ডকুমেন্টগুলো থাকা আব্যশক। আমরা এই ডকুমেন্ট গুলোকে ৩টি ভাগে ভাগ করব। অর্থাৎ যাদের বয়স ০-৪৫ দিনের মধ্যে তাদের ক্ষেত্রে যেসব ডকুমেন্ট লাগবে। যাদের বয়স ৪৬ দিন থেকে ৫ বছর তাদের ক্ষেত্রে যেসব ডকুমেন্ট লাগবে। এবং সর্বশেষ যাদের বছস ৫ বছরের ঊর্ধ্বে তাদের ক্ষেত্রে কি কি ডুকেমন্ট প্রয়োজন হতে পারে।

যাদের বয়স ০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে 

  • টিকা কার্ড বা হাসপাতালের ছাড়পত্র
  • পিতা-মাতার NID কপি
  • বাড়ির ট্যাক্স বা খতিয়ান রশিদ
  • পিতা-মাতার জন্ম সনদ অনলাইন কপি
  • পিতা/মাতার মোবাইল নম্বর

যাদের বয়স ৪৬ থেকে ৫ বছর

  • পিতা-মাতার NID কপি
  • সীলসহ স্বাস্থ্য কর্মীর প্রত্যায়নপত্র টিকা কার্ড / স্বাক্ষর
  • বাড়ির ট্যাক্স বা খতিয়ান রশিদ
  • পিতা-মাতার জন্ম সনদ অনলাইন কপি
  • পিতা মোবাইল নম্বর
  • প্রতিষ্টান প্রধান কতৃক সত্যায়িত প্রত্যয়ন পত্র
  • আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের ১ কপি রঙিন ছবি ও
  • জন্ম নিবন্ধন অনলাইন ফরম

যাদের বয়স ৫ বছরে ঊর্ধ্বে

  • ৫ম শ্রেণী/ ৮ম শ্রেণী/ ১০ম শ্রেণী অথবা উচ্চ মাধ্যমিক পাশের সার্টিফিকেট
  • এমবিবিএস বা ডিগ্রিধারী চিকিৎসক কতৃক প্রত্যয়ন পত্র
  • ইউপি চেয়ারম্যান কতৃক বয়স সত্যায়িত প্রত্যয়ন পত্র (নিরক্ষরদের ক্ষেত্রে প্রযযোজ্য হলে)
  • পিতা-মাতার NID কপি
  • পিতা-মাতার জন্ম সনদ অনলাইন কপি
  • বাড়ির দলিল, ট্যাক্স বা খতিয়ানের রশিদ ইত্যাদি।

অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করার নিয়ম

আপনার সন্তান অথবা পরিবারের অন্য সদস্যদের অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করা নিয়ম দেখানো হলো। আপনি যদি সব কিছু বুঝে দেখে শুনে আবেদন করেন তাহলে কোন রকম সমস্যা ছাড়ায় সঠিকভাবে আবেদন করতে পারবেন। আবেদনের পূর্বে উল্লেখিত চার্টের আলোকে প্রার্থীর বয়স পূর্বক প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট গুলো সংগ্রহ করে নিন। অনলাইনে জন্ম নিবন্ধন করতে প্রথমে যেকোন ব্রাউজারে গিয়ে এড্রেস বারে bdris.gov.bd লিখে সার্চ করুন। তারপর অয়েবসাইটের মেনুবার থেকে জন্ম নিবন্ধন থেকে ‘নতুন জন্ম নিবন্ধের আবেদন’ অপশনে ক্লিক করুন।

১ম ধাপঃ প্রথম ধাপে জন্ম নিবন্ধনের ঠিকানা সিলেক্ট করতে হবে। আপনার সামনে ৩টি অপশন থাকবে যেমন:

  • জন্মস্থান
  • স্থায়ী ঠিকানা
  • বর্তমান ঠিকানা

উল্লেখিত যেই স্থান থেকে আপনি জন্ম নিবন্ধনের আবেদন করতে চান সেটি সিলেক্ট করে ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন।

২য় ধাপঃ এই পার্যায়ে প্রার্থীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিতে হবে যেমন :

  • নামের প্রথম অংশ ও শেষের অংশ বাংলায়
  • নামের প্রথম অংশ ও শেষের অংশ ইংরেজিতে
  • জন্ম তারিখ, সাল ও মাস
  • লিঙ্গ
  • জন্ম স্থানের ঠিকানা যেমন: দেশ, বিভাগ, জেলা, উপজেলা, গ্রাম/ মৌজা/ মৌহল্লা

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ প্রার্থীর নামটি যদি এক অংশ বিশিষ্ট হয়। অর্থাৎ নামের আগে বা পরে কোন ধরেনর পদবী, উপাধি বা ২য় অংশ না থাকে যেমন: আকাশ, রাসেল, সজিব ইত্যাদি হয়ে থাকে তাহলে নামের ২য় অংশের ঘরে বাংলায় ও ইংরেজি প্রার্থীর নাম বসাবেন। কেননা ২য় অংশটি * স্টার যুক্ত যেটি অব্যশই দিতে হবে। সবগুলো তথ্য পিতা মাতার NID বা জন্ম সনদ আলোকে সঠিকভাবে দেওয়ার পর ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন।

৩য় ধাপঃ এই ধাপে আবেদন কারীর বা প্রার্থীর পিতা-মাতার তথ্য দিতে হবে যেমন:

  • পিতা-মাতার জাতীয়তা
  • পিতার-মাতার নাম বাংলায় ও ইংরেজিতে
  • পিতা-মাতার জন্ম নিবন্ধন নম্বর ও
  • পিতা-মাতার NID নম্বর

সবগুলো তথ্য তাদের ডকুমেন্ট গুলো অনুসারে দেওয়ার পর আবারও ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন।

৪র্থ ধাপঃ আনার জন্ম নিবন্ধন ঠিকানা সিলেক্ট করুন। তার জন্য ‘কোনটিই’ নয় বাটনে ক্লিক করুন। আপনার জন্মস্থান ঠিকানা ও স্থায়ী ঠিকানা যদি একই হয় তাহলে ‘একই’ বাটনে ক্লিক করলেই হবে। আর আপনার জন্মস্থান ও স্থায়ী ঠিকানা ভিন্ন হয় তাহলে। দুটি ঠিকানা আলাদা ভাবে পূরণ করতে হবে। এভাবে সবগুলো ঠিকানা দেওয়ার পর ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন।

৫ম ধাপঃ এই ধাপে আবেদনকারীর সম্পর্ক কনফর্ম করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যদি নিজের জন্য আবেদন করেন তাহলে ‘নিজ’ সিলেক্ট করুন। আর যদি আপনার ছেলে সন্তানের জন্য আবেদন করেন তাহলে সেটি সিলেক্ট করুন।এরপর একটু নিচে ডকুমেন্ট আপলোড অপশন দেখতে পাবেন। সেখানে উল্লেখিত ডকুমেন্ট গুলো আপলোড করে ‘পরবর্তী’ তে ক্লিক করুন। তাহলে আপনার সামনে ইতিপূর্বে পূরণকৃত সকল তথ্য আরোও একবার দেখানো হবে। সবগুলো তথ্য ভালো করে কাগজপত্রের সাথে মিলিয়ে দেখুন। কেননা কোন তথ্য ভুল হলে পরবর্তীতে জন্ম সনদ সংশোধন ঝামেলায় পড়ে যেতে পারেন। তাই সব খুব ভালোভাবে চেক করে নিন।

যদি কোন তথ্য ভুল থাকে তাহলে ‘পূর্ববর্তী’ বাটনে ক্লিক করে সংশোধন করে নিন। আর সব ঠিক থাকলে নিচে আপনার বা প্রার্থীর অভিভাবকের ফোন নাম্বার দিয়ে ওটিপি (OTP) বাটনে ক্লিক করুন। তারপর ফোনে আসা কোডটি বসিয়ে ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করুন। তহলে আপনার আবেদনটি ছুড়ান্ত হবে।

আবেদন সম্পন্ন হওয়ার পর নিম্নে একটি আবেদন নাম্বার দেখতে পাবেন। সেটি কোথাও নোট করে রাখুন। তারপর ‘প্রিন্ট’ অপশনে ক্লিক করে আবেদন পত্রটি প্রিন্ট করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ আগামী ৩০ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিবন্ধকের কার্যালয় দাখিল করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *