পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়ম ও সংশোধন করতে কি কি লাগে ? পাসপোর্টে তথ্যের ভুল এটি একটি মারাত্মক সমস্যা। আমাদের মধ্যে এমন অনেকে আছেন যাদের পাসপোর্টের সাথে জাতীয় পরিচয়পত্রে তথ্যের মিল নেই। আবার অনেক অপ্রাপ্তবয়স্ক পাসপোর্টধারী রয়েছেন যাদের জন্ম নিবন্ধনের সাথে পাসপোর্টের তথ্যের গড়মিল রয়েছে। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে গত ১৩ ডিসেম্বর ২০২২ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি নোটিশ প্রকাশ করা হয়।
যেখানে উল্যেখ ছিল দেশ এবং দেশের বাহিরে অবস্থানরত পাসপোর্টধারী। যাদের পাসপোর্টের তথ্যের সাথে জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের গড়মিল রয়েছে। তারা চাইলে নির্ধারিত ফরমে আবেদন পূর্বক পাসপোর্টের ভুল তথ্য সংশোধন করে নিতে পারবেন। আজকের পোস্টে আমি পাসপোর্ট সংশোধনের নিয়ম, ফরম পূরণ প্রক্রিয়া, পাসপোর্টে তথ্যের ভুল সংশোধন, পাসপোর্টের তথ্য পরিবর্তন করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে, তথ্য পরিবর্তন করলে কি কি অসুবিধা হবে, কত টাকা লাগবে বিস্তারিত আলোচনা করব আজকের পোস্টে।
আরোও পড়ুন: ই পাসপোর্টের বর্তমান অবস্থা যাচাই করুন
আলোচনার বিষয়
বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট সংশোধন করার নিয়ম
আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্টের ভুল সংশোধন করতে চান। তাহলে অব্যশই কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। যেমন: একবার কোন তথ্য সংশোধন করলে আপনি চাইলে ২য় বার সেই তথ্য পরিবর্তন করতে পারবেন না। এমন অনেক দেশ রয়েছে যারা পাসপোর্টের তথ্যের পরিবর্তন দেখলে ভিসা বা ইমিগ্রেশনে সমস্যা করতে পারে। তাই পাসপোর্টের তথ্য পরিবর্তনের পূর্বে সর্তক থাকুন। সব কিছু বুঝে আপনি যদি পাসপোর্টের তথ্য পরিবর্তন করতে চান তাহলে পোস্টটি Continue করুন।
পাসপোর্টের তথ্য সংশোধনের আবেদন করতে প্রথমে এখানে ক্লিক করুন। তাহলে আপনি একটি ওয়েবসাইটে পৌঁছে যাবেন। সেখান থেকে আবেদনের ফরমটি ডাউনলোড করে নিন। ফরমটি ফ্রিন্ট করে বের করার পর এখন সঠিক তথ্য দিয়ে ফরমটি পূরণ করতে হবে। যেমন: প্রথম ঘরে আপনার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের নাম (রেজিওনাল পাসপোর্ট অফিস ঢাকা আগার গাঁও) ডান পাশে পাসপোর্টের ধরণ নির্বাচন করুন। অর্থাৎ আপনি কি সাধারণভাবে পাসপোর্ট সংশোধনের আবেদন করতে চাচ্ছেন নাকি ইর্মাজেন্সি। যদি সাধারণ আবেদন করতে চান তাহলে Regular (সাধারণ) বক্সে টিকমার্ক দিন। আর যদি জরুরির ভিত্তিতে পরিবর্তন করতে চান তাহলে Express (জরুরি) বক্সে টিকমার্ক দিন।তারপর ২য় ঘরে বাংলা এবং ইংরেজিতে আপনার নাম দিতে হবে। ইংরেজিতে নাম বসানোর ক্ষেত্রে অব্যশই বড় হাতের অক্ষর (Capital letter) দিয়ে লিখতে হবে। ৩য় ঘরে আপনার পাসপোর্টের নম্বর, ইস্যু স্থান ও তারিখ এবং পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে। এবং ডান পাশে পাসপোর্ট সংশোধনের ফি প্রদানের তথ্য, রশিদ নম্বর, তারিখ ইত্যাদি বসাতে হবে।
চাহিত সংশোধন তথ্য:
এই ঘরের বাম পাশের অংশে আপনার পাসপোর্টের যেই ভুলটি সংশোধন করতে চান তার বর্তমান প্রদর্শিত তথ্য দিতে হবে। এবং ডান পাশে পাসপোর্টের সংশোধিত তথ্য কি রকম হবে তা পূরণ করতে হবে। তারপর নিচে বর্তমান তারিখ ও আবেদনকারীর স্বাক্ষর দিতে হবে।
পাসপোর্ট সংশোধনের ২য় পাতা
এ পর্যায়ে আপনাকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট সংযুক্ত করতে হবে। অর্থাৎ আপনি কোন কোন ডুকেমন্টের ওপর ভিত্তি করে আপনার পাসপোর্টের তথ্য পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন তার প্রমাণাদি যুক্ত করতে হবে। যেমন: আপনি যদি আপনার নাম বা বয়স পরিবর্তন করতে চান তাহলে ১ম ঘরে জাতীয় পরিচয়পত্রে ফটোকপি, ২য় নম্বরে পাসপোর্টের বর্তমান ফটোকপি। আপনি যদি আপনার পিতা-মাতর নামের তথ্য সংশোধন করতে চান তাহলে তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ফটোকপি যুক্ত করতে হবে। নিচের ছবিটি লক্ষ করলে বুঝতে পারবেন কিভাবে লিখতে হবে। ফরমটি সম্পূর্ণভাবে পূরণ হয়ে গেলে আপনাকে একটি অঙ্গীকার নামা ডাউনলোড করে সেটি সঠিক তথ্য দিয়ে পূরণ করে আপনার ফরমের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। অঙ্গীকার নামা ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।
এ পর্যায়ে আপনার সকল ডকুমেন্ট একসাথে করতে হবে অর্থাৎ:
- আবেদনের ফরম
- অঙ্গীকার নামা
- আপনার বর্তমান পাসপোর্টের কপি
- আপনার NID ও স্কুল সার্টিফিকেট অথবা পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়ত্র কপি অর্থাৎ যার তথ্য পরিবর্তন করতে চান তার জাতীয় পরিচয়পত্র।
সবগুলো তথ্য একসাথে নিকটস্থ্য রেজিওনাল অফিসে গিয়ে জমা করুন। তারা তথ্য গুলো যাচাই বাছাই করে সবগুলো ভুল সংশোধন করে আপনার পাসপোর্ট আপনার নিকট রিইস্যু হয়ে বা পরিবর্তিত হয়ে চলে আসবে। এই নিয়মটি অনুসরণ করে বাংলাদেশ থেকে যেকোন নাগরিক তার পাসপোর্ট সংশোধনের আবেদন করতে পারবে।
বিদেশ থেকে পাসপোর্ট সংশোধনের নিয়ম
আপনি যদি ইতিমধ্যে দেশের বাহিরে অবস্থান করে থাকেন। এবং কোন প্রয়োজনে আপনার পাসপোর্টের তথ্য সংশোধন করতে চাচ্ছেন। সেক্ষেত্রে আপনি ঐ দেশের বাংলাদেশি দূতাবাসে গিয়ে যোগাযোগ করতে পারেন। এবং তাদের ওয়েবসাইট থেকে আবেদনের নিয়মসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট, আবেদনের ফরম, অঙ্গীকার নামা ইত্যাদি সংগ্রহ করতে পারবেন। সবগুলো ডকুমেন্ট সংগ্রহ করে পূর্বের নিয়মে পূরণ করে দূতাবাসে জমা প্রদান পূর্বক আবেদন করতে পারেন। আপনি যদি নিয়ম মেনে পাসপোর্টের তথ্য সংশোধনের আবেদন করতে পারেন।
তাহলে খুব সহজে আপনার পাসপোর্টটি সংশোধন করে নিতে পারবেন। তাই যাদের পাসপোর্টে তথ্যের ভুল আছে তারা খুবদ্রুত আবেদন করে সেটি ঠিক করে নেওয়ার এটাই সুবর্ণ সুযোগ কেননা যেকোন সময় এই নিয়ম পরিবর্তন বা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আশা করি আজকের তথ্যগুলো আপনাকে পাসপোর্টের ভুল সংশোধন করতে অনেকটা সাহায্য করবে। পাসপোর্ট সম্পর্কিত কোন জিজ্ঞাসা থাকলে অব্যশই আমাদের কমেন্ট করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ।