একজন নাগরিকের কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা জাতীয় পরিচয় পত্র ব্যক্তিসত্তা বা ব্যক্তি পরিচয় বহন করে। দেশের একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকের কাছে NID থাকা আব্যশক । আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব কিভাবে ঘরে বসে হাতে থাকা অ্যান্ড্রয়েড ফোন দিয়ে নতুন জাতীয় পরিচয় পত্র তৈরি বা NID Card তৈরির আবেদন করা যায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক।
আলোচনার বিষয়
জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি আবেদন প্রক্রিয়া
নতুন জাতীয় পত্র তৈরি ক্ষেত্রে অনলাইনে সকল ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে প্রাথমিক আবেদন করে চূড়ান্ত পর্যায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন নিবন্ধকের কার্যালয়ে আবেদন করতে হবে। আজকের পোস্টে আমরা নতুন জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন সংক্রান্ত সকল তথ্য তুলে ধরার চেষ্টা করব।
যেমন: নতুন আবেদন প্রক্রিয়া, আবেদন করতে কি কি কাগজপত্র লাগবে? কত টাকা খরচ হবে? কোথায় আবেদন কপি জমা দিতে হবে? কবে স্মার্ট কার্ড হাতে পৌঁছাবে? ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
সরাসরি আবেদন পক্রিয়
আপনি যদি অনলাইন ছাড়া সরাসরি নিজ এলাকা থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের আবেদন করতে চান তাহলে আপনাকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। কেননা প্রত্যেক বছর সরকারিভাবে ভোটার হওয়ার জন্য প্রত্যেক এলাকায় ভোটার প্রতিনিধিদের পাঠানো হয়। তারা সামান্য কিছু ডকুমেন্টের বিনিময়ে প্রাপ্তবয়স্ক নারী পুরুষদের ভোটার আবেদন পত্র গ্রহণ করেন এবং নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে তাদের ভোটার হওয়ার কার্যকর্ম সম্পন্ন করেন।
আবেদন করতে যে সকল কাগজপত্র লাগবে
- পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি
- প্রার্থীর জন্ম নিবন্ধন কপি
- মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট
- ইউটিলিটি বিলের কপি
- নাগরিকত্ব সনদ
- ভোটার অঙ্গীকার নামা (প্রয়োজন হলে)
অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া
অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার আবেদন করতে চাইলে ফোনের ইন্টারনেট সংযোগ চালু রেখে যেকোন ব্রাউজারের এড্রেস বারে লিখুন services.nidw.gov.bd এবং সার্চ করুন। তারপর সাইটে ঢুকে ‘নতুন নিবন্ধনের জন্য আবেদন’ অপশনটাতে ক্লিক করুন।
১ম ধাপঃ এই ধাপে আপনার ব্যক্তিগত কিছু তথ্য দিতে হবে যেমন:
- পুরো নাম (ইংরেজিতে)
- জন্ম তারিখ
- মাস
- সাল ও
- কনফার্মেশন ক্যাপসা
এসব তথ্য দেওয়ার সময় অব্যশই আপনার স্কুল সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট বা লাইসেন্স দেখে পূরণ করুন। সব গুলো তথ্য দেওয়া হয়ে গেলে ‘বহাল’ বাটনে ক্লিক করুন
২য় ধাপঃ এপর্যায়ে আপনাকে একটি সক্রিয় ফোন নাম্বার দিতে হবে। আপনার নিজের বা পরিবারের অভিভাবকের ফোন নাম্বার দিতে পারেন। ফোন নাম্বার দিয়ে ‘বার্তা পাঠান’ অপশনে ক্লিক করুন। উক্ত নাম্বারে নির্বাচন কমিশন সার্ভার থেকে ৬-৮ ডিজিটের একটি কোড পাঠানো হবে। কোডটি সংগ্রহ করে অয়েবসাইটে বসিয়ে ‘বহাল’ অপশনে ক্লিক করুন।
৩য় ধাপঃ আপনার একটি ইউজার নেম, পাসওয়ার্ড ও পুনরায় পাসওয়ার্ড বসিয়ে ‘বহাল’ অপশনে ক্লিক করুন।
৪র্থ ধাপঃ এই ধাপে আপনার সামনে ‘বিস্তারিত প্রোফাইল’ একটি অপশন দেখাবে। অপশনটাতে ক্লিক করলে আপনাকে আরোও কিছু ব্যক্তিগত তথ্য দিতে বলবে। তথ্য দেওয়ার জন্য ‘এডিট’ অপশনে ক্লিক করুন।
প্রার্থীর যেসকল তথ্য দিতে হবে
- ব্যক্তিগত তথ্য
- নাম (বাংলা)
- নাম (ইংরেজি)
- লিঙ্গ
- রক্তের গ্রুপ
- জন্মস্থান
- জন্ম নিবন্ধন নম্বর
- জন্ম তারিখ
- বৈবাহিক অবস্থা
- শিক্ষাগত যোগ্যতা
- অসমর্থতা
প্রার্থীর পিতার যেসকল তথ্য দিতে হবে
- পিতার নাম (বাংলা)
- পিতার নাম (ইংরেজিতে)
- পিতার জাতীয়তা
- পিতার NID নম্বর
প্রার্থীর মাতার যেসকল তথ্য দিতে হবে
- মাতার নাম (বাংলা)
- মাতার নাম (ইংরেজিতে)
- মাতার জাতীয়তা
- মাতার NID নম্বর
তবে এই ক্ষেত্রে আপনার তথ্য গুলো অব্যশই আপনার সার্টিফিকেট, পাসপোর্ট বা লাইসেন্সের তথ্য আনুযায়ী বসাবেন এবং আপনার পিতা মাতার তথ্য গুলো তাদের NID কার্ডের তথ্য অনুযায়ী বসানোর চেষ্টা করবেন। এতে করে ভবিষ্যতে এনআইডি সংশোধন সমস্যা থেকে দূরে থাকতে পারবেন। সবগুলো তথ্য দেওয়া হয়ে গেলে ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন।
৫ম ধাপঃ এই পর্যায়ে আপনার বর্তমান অবস্থান চিহ্নত করুন। অর্থাৎ আপনার দেশ, গ্রাম, ইউনিয়ন, জেলা, উপজেলা, বিভাগ ইত্যাদি। আপনার স্থায়ী ঠিকানা বর্তমান ঠিকানা যদি একই হয় তাহলে স্থায়ী ঠিকানার পাশের খালি বক্সে টিকমার্ক দিলেই হবে। সবগুলো তথ্য সঠিকভাবে পূরণের পর আবারও ‘পরবর্তী’ বাটনে ক্লিক করুন। তাহলে আপনার আবেদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
এখন আপনার সামনে দুটি অপশন দেখাবে ‘পিছনে’ ও ‘সাবমিট’ আপনার সব গুলো তথ্য ঠিক থাকলে সাবমিট বাটনে ক্লিক করুন। আর কোন তথ্য ভুল মনে হলে পিছনে ক্লিক করে তথ্য সংশোধন করে নিন। ‘সাবমিট’ বাটনে ক্লিক করার সাথে সাথে আপনার আবেদনটি পেন্ডিং এ চলে যাবে।
এখন ডাউনলোড অপশনে ক্লিক করে আপনার আবেদনের PDF কপিটি ডাউনলোড করুন। তারপর যেকোন কম্পিউটার দোকানে গিয়ে আবেদন ফর্মটি প্রিন্ট করে নিন।
এবার ফর্মটি সহ উপজেলা নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে কাগজ পত্র গুলো জমা দিয়ে আসুন। তারপর নির্দিষ্ট তারিখের মধ্যে তারা আপনাকে ছবি তোলার জন্য ডাকবে। আপনি ছবি তুলে আসলে নির্দিষ্ট সময়ের পর আপনার নতুন জাতীয় পরিচয়পত্রটি অনলাইন থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। সাধারণত সর্বোচ্চ ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে অনলাইন কপি ডাউনলোড করা যাবে।
আবেদন পত্রের সাথে যেসকল কাগজপত্র যুক্ত করতে হবে
- স্কুল সার্টিফিকেট বা এডমিট কার্ড
- পিতা-মাতার NID সত্যায়িত কপি
- নাগরিকত্ব সনদ বা প্রত্যায়নপত্র
- জন্ম সনদের সত্যায়িত কপি
- শনাক্তকারীর NID নাম্বার ও স্বাক্ষর